VJRC Career Guidance Blog

Vijaygarh Jyotish Ray College | Affiliated to the University of Calcutta | NAAC Accredited | ISO 9001:2015 Certified

Inspiration

নিজের সফল ক্যারিয়ার গঠনে আপনার যা করণীয়

বর্তমান বিশ্বের ইঁদুর দৌড়ে জ্ঞান অর্জন আর কেরিয়ার গঠন সমার্থক নয়। ঠিক যেমন জ্ঞানী হওয়া আর সফল হওয়া এক নয়। এখন কেরিয়ার গঠনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত ডিগ্রী এবং উপার্জন। তাই শুধুমাত্র লক্ষ্যহীন পড়াশোনা বা একঘেয়ে মেহনতই কেরিয়ার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়। সঠিক নির্দেশনা এবং সহায়তার অভাবে আমাদের দেশের বহু মেধাবান, দক্ষ ছাত্র-ছাত্রী সফল কেরিয়ারের রেস থেকে পিছু হঠে যায় প্রতি বছর। যাদের তেমন কোনো গাইড বা সোর্স নেই তাদের ক্ষেত্রে সঠিক পথ বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। তাই আসুন আজকে আমরা দেখে নিই কী কী বেসিক পদক্ষেপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনারাও একটি সুন্দর এবং সফল ক্যারিয়ার গঠনে সক্ষম হবেন।

প্রথমেই আপনাকে মনে রাখতে হবে ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিজের একাডেমিক দক্ষতার উপর জোর দিলেই হবে না তার সঙ্গে সঙ্গে জোর দিতে হবে আপনার ব্যক্তিত্ব গঠন ও পারিপার্শ্বিক দক্ষতার দিকগুলিতেও। সুষ্ঠুভাবে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করার জন্য আপনি নিচের ধাপ গুলি অনুসরণ করতে পারেন –

১. লক্ষ্য নির্ধারণ

কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক দিশা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য। তাই সফলতা পাওয়ার রাস্তা বেছে নেওয়ার আগেই ভেবে নিন আপনি এই যাত্রার শেষে কোথায় পৌঁছতে চান। এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার যে লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও আপনাকে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। বিরাট লক্ষ্য কে প্রথমেই দুইটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। প্রথম হবে স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য, যা একাডেমিক বা প্রফেশনাল গোল কে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিতে সাহায্য করবে। এবং দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য যা আপনার কেরিয়ারের গন্তব্য কে নির্দেশ করবে। স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্যের ধাপে ধাপে বাস্তবায়নই একদিন আপনাকে পৌঁছে দেবে আকাঙ্খিত লক্ষ্যে।

২. দক্ষতা অর্জন

লক্ষ্য নির্ধারণের পর নজর দিন আপনার কর্মদক্ষতার প্রতি। প্রয়োজনীয় বিষয়ে নিজের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কাজের গতি বাড়ান। প্রয়োজনে বেশি বেশি বই পড়ুন, ইন্টারনেটের সহায়তা নিন অথবা কোন কোর্সে ভর্তি হন যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং আপনার কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ; কারণ দিনের শেষে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে সফল কেরিয়ার মানেই কিন্তু অধিক অর্থ বা একটি ভালো চাকুরি নয় – বরং আপনার দক্ষতা গুলির সর্বোচ্চ মূল্যায়ন। তাই এটা খুব স্বাভাবিক যে আপনি যত বেশি দক্ষ হয়ে উঠবেন, আপনার সফলতার সম্ভাবনা তত অধিক হবে।

৩. কর্ম পরিকল্পনা

শুধু সঠিক লক্ষ্য এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলেই হবে না, তার সঙ্গে দরকার আপনার কাজের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সারাদিনের জন্য রুটিন ভিত্তিক প্ল্যান। ধরা যাক প্রতিদিন আট থেকে নয় ঘন্টা সময় আপনার কেরিয়ার বিষয়ক কাজে আপনি ব্যয় করেন। এখন সেই আট বা নয় ঘণ্টার মধ্যে আপনি কোন সময় কতক্ষণ ধরে কোন কাজটি করবেন তার সঠিক হিসেব থাকলে তবেই সঠিক কাজ সঠিক সময়ে সম্পূর্ণ করতে পারবেন এবং সময়ের মধ্যে সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। অন্যথা সময় পেরিয়ে গেলেও আপনার পূর্বনির্ণীত লক্ষ্য পূর্ণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না। 

৪. সময়ের যথাযথ ব্যবহার

প্রতিদিনের কাজ, পড়াশুনা, দৈনন্দিন কর্তব্য এবং পূর্ব নির্ধারিত কর্ম পরিকল্পনা রুটিন মাফিক সম্পন্ন না করলে সময়ের অপচয় হতে পারে। আর সময়ের যথাযথ ব্যবহার না করলে পারলে, অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে দৈনন্দিন টার্গেট, চারিদিক থেকে ঘিরে ধরতে পারে হতাশা এবং ব্যর্থতার দুশ্চিন্তা। তাই আগামী জীবনে সফলতা আনার জন্য এবং কেরিয়ার গঠন করার জন্য ছাত্র-ছাত্রী বা চাকরিজীবী সবার জন্যই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো প্রাপ্ত সময়ের সুব্যবহার। সুতরাং খামখেয়ালী জীবনযাপনের বদলে যদি সুশৃংখল রুটিন মাফিক জীবন যাপন করা হয় তাহলে দ্রুত মিলবে সাফল্যের চাবিকাঠি।

৫. প্রায়োরিটি নির্ধারণ

সময় সদব্যবহার ছাড়াও যে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে, তা হল প্রায়োরিটি নির্ধারণ করা এবং নিজের লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া। জীবন গঠনের প্রাক্কালে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী যুবক-যুবতী সঠিক প্রায়োরিটি নির্ধারণ করতে সক্ষম হয় না। কখন ও বা ব্যক্তিগত কারণে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যায়। কখনো বা পরিস্থিতির শিকার হয় তারা। সব সময় মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি মানুষের প্রায়োরিটি ভিন্ন। তাই স্থান-কাল পাত্র ভেবে নিজের প্রায়োরিটি গুলি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এমন কোন কাজে সময় অপচয় করা চলবে না যাতে আপনি আপনার পথ ভ্রষ্ট হন। 

৬. চট জলদি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ

জীবনে অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতি আসে এবং সেই সময় সু কৌশলে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া বিশেষ জরুরি হয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এক বিশেষ দক্ষতার মধ্যেও পড়ে। পারিপার্শ্বিক সুযোগ-সুবিধা এবং পেশার সম্ভাবনার দিকগুলি বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এইভাবে কোন ব্যক্তির যেমন নিজের স্বকীয়তাকে না হারিয়ে ফেলে নিজের প্রায়োরিটির কথা মাথায় রেখে এবং নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার তেমনি হিসেব করা দরকার সেই সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হতে পারে। কারণ অনেক সময় একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি মানুষের পেশাগত জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনকে ছারখার করে দিতে পারে।

৭. রেফারেন্স নেটওর্য়াক তৈরি

কেরিয়ার গঠনের পথে আরো একটি প্রয়োজনীয় ধাপ হলো রেফারেন্স নেটওয়ার্ক তৈরি কারণ আপনি জেনে হয়তো অবাক হতে পারেন যে বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি কাজের সন্ধান ও সূত্র মেলে নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে। আপনার জানাশোনা বন্ধুবান্ধব অথবা আত্মীয় বর্গের পেশা এবং কর্মজীবন সম্পর্কে অবহিত থাকুন এবং সৌজন্য বিনিময়ের পাশাপাশি ক্যারিয়ার সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিন। তাদের রেফারেন্স এ ভিন্ন কর্ম সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হোন। দরকার হলে সাহায্য নিন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের যেখানে অনেক সময় বিভিন্ন শূন্য পদের বিজ্ঞাপনের দেখা মেলে। 

৮. টেকনোলজিক্যাল জ্ঞান

বর্তমান আধুনিক যুগে নিজের বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত হওয়া ছাড়াও টেকনোলজি সংক্রান্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। বিশেষত কোভিড পরবর্তী সময়ে অনলাইন প্রসেস এখন অপরিহার্য প্রায়। অনলাইন ফর্ম ফিলাপ, অনলাইন ট্রানজেকশন, জব অ্যাপ্লিকেশন, ইমেইল এবং বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের জন্য কম্পিউটারের ইন্টারনেট এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে বেসিক জ্ঞান না থাকলেই নয়। যেমন ধরুন এম এস ওয়ার্ড, এম এস এক্সেল, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেশন ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী হওয়া বর্তমান যুগে কেরিয়ার গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইল স্টোনের মতন। 

৯. নিজস্ব বায়োডাটা এবং উপস্থাপন ক্ষমতা

উপরে উক্ত সমস্ত ধাপ গুলি সম্পন্ন হলে এইবার পালা নিজের একটি সিভি বা বায়োডাটা বানানো এবং নিজেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উপস্থাপন করা। তা সে ইন্টারভিউ হোক বা ওয়ার্ক ওয়েবসাইট, বর্তমান যুগে অনেক পেশার ক্ষেত্রেই আবেদন করার জন্য অ্যাপ্লিকেশনের সাথে সাথে দিতে হয় একটি সুসজ্জিত সিভি বা বায়োডাটা যেখানে আপনার স্কুলিং, ইউ জি, পি জি সমস্ত কোর্সের মার্কসের সাথে সাথে থাকে ব্যক্তিগত তথ্য যোগাযোগের মাধ্যম এবং আপনার বিভিন্ন দক্ষতার একটি লিস্ট। সিভি তৈরি ছাড়াও নিজের দক্ষতা গুলিকে উপস্থাপন করার জন্য আপনি সাহায্য নিতে পারেন বিভিন্ন গ্লোবাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যেমন গ্লাস ডোর, লিংকডইন ইত্যাদি। সেখানে যেমন আপনি বিভিন্ন রকম কাজের বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন তেমনি আবেদন করতে পারবেন বহু শূন্য পদের জন্য।

১০. ভুল এবং অতীত এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার মনোভাব

অনেকের জীবনের অতীতেই থাকে বিফলতার কালো ছাপ। তাতে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে সব সময় অতীত থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে যদি আপনি আগামী জীবনে সফলতার মুখ দেখতে চান। আপনি যখনই আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করবেন এবং এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন স্বাভাবিকভাবেই চারপাশে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে। আপনাকে সেগুলির সম্মুখীন হতে হবে এবং অতীতে কোনো ভুল থাকলেও সেই ভুল পর্যালোচনা করে সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। পুরাতন অতীত, ব্যর্থতা বা কোন বেদনাদায়ক স্মৃতি নিয়ে থমকে থাকবেন না অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বরং আগামী জীবন সুগম করে তুলুন। 

১১. আত্ম নিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম বিশ্বাস

অনেক সময় আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ি অতিরিক্ত আনন্দ বা দুঃখে আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণে লক্ষ্য থেকে সরে যাই। কিন্তু সফল কেরিয়ার গড়তে গেলে খেয়াল রাখতে হবে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সংযমের মাধ্যমে সকল প্রতিকূলতাকে সমানভাবে যাতে সামনা করতে পারি, যাতে কখনোই কোন বিশেষ অনুভূতি বা উচ্ছ্বাস আমাদের সফলতার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অনেক সময় অনেকেই হয়তো আপনাকে এবং আপনার কঠোর পরিশ্রমকে প্রেরণা দেওয়ার বদলে সমালোচনা করবে। তাতে দমে না গিয়ে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন এবং নিঃশব্দে পরিশ্রম করে যান এই আত্মবিশ্বাস এবং মেধাই একদিন আপনাকে পৌঁছে দেবে সফল ক্যারিয়ারের দরজায়।

১২. ইতিবাচক মনোভাব এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা

কিছু কিছু সময় হয়তো যথেষ্ট মেধা এবং দক্ষতা থাকার সত্বেও যোগ্য সম্মান এবং সফলতা আপনার কাছে আসবে না। কিন্তু কখনোই নিজের মনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনার স্থান দেবেন না। হতাশ না হয়ে বরং আরো একবার চেষ্টা করুন। অনেক ক্ষেত্রেই নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষের মানসিক এমনকি শারীরিক আচরণে পরিবর্তন আসে। হতাশা ও অবসাদ থেকে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কখনো কখনো অপরাধপ্রবণতা ও আত্ম হননের ঘটনা দেখা যায়। নিজেকে কখনোই এতখানি অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না। একইভাবে অবহেলা করবেন না আপনার স্বাস্থ্য কে। কারণ শারীরিক অসুস্থতা অনেক সময় ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে নিয়মিত শরীরের যত্ন নিন। সম্ভব হলে শরীরচর্চার দিকে নজর রাখুন। সাধ্যমত ডায়েট সচেতন খাদ্যাভ্যাস করুন। কারণ শরীর ভালো থাকলে আপনার মনও থাকবে সতেজ বাড়বে কর্ম ক্ষমতাও। 

সবশেষে মনে রাখবেন সফল ক্যারিয়ারের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয় না। তাই নিজের মেধা এবং দক্ষতা অনুযায়ী যে কাজেই আপনি আপনার সন্তুষ্টি খুঁজে পাবেন, সেটাই আপনার জন্য সফলতম ক্যারিয়ার অপশন। তাই আগেই নিজেকে পর্যালোচনা করুন, নিজেকে সঠিক ভাবে জানুন এবং নিজেকে ভালবাসুন, নিজের স্বপ্নগুলোকে খুঁজে নিতে শিখুন। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে হয়তো প্রতিকূলতা আসবে কিন্তু ভেঙে না পড়ে নিয়তির উপর আস্থা রেখে এগিয়ে চলুন। মনে রাখবেন পরিকল্পিত সময়ে কাঙ্খিত সফলতা না পেলেও হাল ছেড়ে দেওয়া একান্তই বোকামি; বরং বারংবার প্রয়াস এবং নিখুঁত অধ্যাবসায় আপনাকে একদিন পৌঁছে দেবে সফল ক্যারিয়ারের স্বর্ণশিখরে।