VJRC Career Guidance Blog

Vijaygarh Jyotish Ray College | Affiliated to the University of Calcutta | NAAC Accredited | ISO 9001:2015 Certified

Exam Preparation & Study Tips

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মক টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ছাত্র জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায় পরীক্ষা। একের পর এক ক্লাস উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য অনেক অধ্যায়ন করতে হয় সব ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু এই স্কুল কিংবা কলেজ অর্থাৎ শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার পরও এই পরীক্ষা আমাদের পিছু ছাড়ে না। কারণ শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় রদ বদলের পালা। অর্থাৎ কর্ম জীবনের দোরগোরায় এসে উপস্থিত হয়। আর কর্ম জীবন মানেই হল প্রতিযোগিতার সাথে হাত মেলানো। স্টেশনের নিত্য যাত্রীর মতো সকলেই প্রতিযোগিতার দৌড়ে ছুটছে। কাকে ফেলে কে আগে যাবে! এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য খুব অধ্যাবসায়ের সাথে প্রস্তুতি নিতে হয়। কোন রকম ফাঁকি দিলেই পিছিয়ে পড়তে হয়। তাই বলা যায়, যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মক টেস্ট পরীক্ষা অত্যন্ত আবশ্যক। এই মক টেস্ট সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগে নেওয়া হয়। এই মক টেস্ট পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবন গড়তে অনেকটা সাহায্য করে। মক টেস্ট হল একটি কাজ বা অনুকরণ ট্রায়াল। পাঠক্রম বহির্ভূত সিলেবাসের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দেওয়ার প্রোগ্রাম। তবে এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগে কেন মক টেস্ট নেওয়া হয়, তা প্রথমে জানা প্রয়োজন।

মক টেস্ট নেওয়ার কারণ

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সারা বিশ্বের প্রতিটা শিক্ষা ব্যবস্থায় এই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শত শত এবং হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর JEE এবং NEET পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু তাদের মধ্যে লঘু সংখ্যক শিক্ষার্থী সফলতা অর্জন করতে পারে। মক টেস্টগুলি শিক্ষার্থীদের সময় মতো পরিচালিত হওয়া, প্রস্তুতি হওয়ার মানসিকতা, কোন বিষয়ের প্রতি দুর্বলতা প্রভৃতি বুঝতে আর নিজের ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মক টেস্ট নেওয়ার কারণগুলি জানা দরকার।

১) পরীক্ষা পদ্ধতির সাথে পরিচিত করানো —

মক টেস্টগুলি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়, যা একেবারে প্রকৃত পরীক্ষার অনুরূপ। এই মক টেস্ট এখন অনলাইন কিংবা অফলাইনে হয়ে থাকে। অনলাইনে সাধারণত পরীক্ষার কাঠামো ও ধরন সম্পর্কে কিছু তথ্য থাকে। কিন্তু অফলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে এর সিলেবাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কের বিস্তারিত জ্ঞান লাভ হয়। শুধুমাত্র এই মক টেস্ট দিলেই পরীক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধা অসুবিধাগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারে।

২) পরীক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ —

মক টেস্টের সময় প্রকৃত পরীক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হয়। বাড়িতে নিজে নিজে অভ্যাস করা আর মক টেস্ট দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। বাড়িতে পড়ার সময় নির্দিষ্ট কোন নিয়মানুবর্তিতা থাকে না। আর সব বিষয় সঠিক ভাবে আয়ত্ত করা যায় না। কিন্তু মক টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ধরন ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করানো হয়। একটি মক টেস্ট প্রকৃত পরীক্ষার উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৩) সময়ের নিয়মানুবর্তী —

পরীক্ষা উপস্থিত হওয়ার সময় পরীক্ষার্থী মানসিক চাপে সময়ে কাজ করার গতি কমে যায়। সেক্ষেত্রে ভুল ভ্রান্তি সম্ভবনা বাড়ে। তাই মক টেস্ট এই সকল সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এটি পরীক্ষার্থী মধ্যে সময় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রশ্ন ঠিক কতটা সময়ে সম্পূর্ণ করতে পারবে, সেই কৌশল আয়ত্ত করতে শেখায়।

৪) ভীতি দূরীকরণ —

এটা প্রমাণিত সত্য যে, অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগেই ভীত হয়ে পড়ে। এটি হওয়ার কারণ হল অনুশীলন ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। কিন্তু নিয়মিত মক টেস্টে অংশ নিলে এই ভীতি দূর হয়ে যায়। এটি পরীক্ষার জন্য কৌশলগত পদ্ধতির বিকাশ করতে সাহায্য করে।

৫) আত্মবিশ্বাস গঠন —

নিয়মিত মক টেস্ট নেওয়া হলে পরীক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় দেখা যায়, পরীক্ষার্থী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগের মুহূর্তে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে না। যার ফল হয় পিছিয়ে পড়া। পরীক্ষার্থী মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়ে পরীক্ষায় বিরূপ ফল লাভ করে। এটাও লক্ষ্য করা যায় যে, বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী কম নম্বর পেয়ে র‍্যাঙ্ক হারানোর ভয়ে অবসাদে চলে যায়। আবার অনেক সময় এর জন্য অনেকের উচ্চ রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। বেশি আত্মবিশ্বাস হারালে একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে সব ভুলে যায় বা অসুস্থ হয়ে যায়। এই মক টেস্ট পরীক্ষার ফলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে প্রকৃত পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সাথে সর্বোত্তম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।

৬) গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন —

নিয়মিত মক টেস্টে অংশগ্রহণ করলে কোন কোন প্রশ্ন কতটা বেশি অধ্যায়ন করা ভালো, সেই সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা লাভ হয়। এই অধ্যায়নগুলি বারবার পাঠ অভ্যাস করার সুযোগ হয়। এমন অনেক সাজেশন প্রস্তুত করা হয়, যা প্রকৃত পরীক্ষায় ৯০% মিল পাওয়া যায়। এর ফলে পরীক্ষায় যদি অনুরূপ প্রশ্নও থাকে, তা খুব সহজে সমাধান করা যায়।

৭) প্রশ্ন উওর পর্যালোচনা —

মক টেস্টের দক্ষতার বিশ্লেষণের জন্য প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন হয়। আগে বুঝতে হবে কোন প্রশ্নের উত্তর কতটা সঠিক সময় দিতে পারবে। প্রশ্নগুলির উওর কেমনভাবে লিখলে খুব সহজে সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারে।

৮) দুর্বলতা দূরীকরণ —

মক টেস্ট কোন বিভাগে বেশি লক্ষ্য স্থির করতে হবে, তা বুঝতে সাহায্য করে। যখন বেশ কয়েকটি মক টেস্ট দেওয়ায় হয়ে যায়, তখন পরীক্ষার্থী নিজেই বুঝতে পারে কোন বিভাগগুলি ভালোভাবে তৈরি হয়েছে। আর কোন বিভাগগুলিতে দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে। এই মক টেস্ট সব কটি বিভাগ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা দান করে। একবার যদি কোন বিষয়ে, কেন দুর্বলতা? সে
ধারনাটি হয়ে যায় তাহলেই খুব সহজে দুর্বলতা কাটিয়ে সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।

৯) সিলেবাস সংশোধন —

একটি মক টেস্ট দিয়ে পরীক্ষার্থী অধ্যায়নের উপাদান ভালোভাবে শিখতে পারে। মক টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার আগে পরীক্ষার্থীর যোগ্যতা পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। যদি পরীক্ষার্থী মক টেস্টের যোগ্য বলে প্রতিপন্ন হয়, তবেই মক টেস্ট দেওয়ার সুযোগ পায়। মক টেস্টের নিয়মিত অনুশীলন প্রায়শই জিজ্ঞাসিত তথ্য এবং কৌশল শক্তিগুলো আয়ত্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিবার অভ্যাসের ফলে স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে। বারবার সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায়নের ফলে অনেক কিছু সংশোধন হয়ে যায়। তার ফলে প্রকৃত পরীক্ষার সময় সিলেবাস নিয়ে কোনরূপ অসুবিধা হয় না।

১০) অগ্রগতির মাত্রা অনুধাবন —

মক টেস্টগুলি পরীক্ষার্থীকে দক্ষতার সাথে এবং সহজে অগ্রগতির মাত্রা অনুধাবন করতে সাহায্য করে। মক পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষার কৌশলগুলি নিয়ে সময় মতো অধ্যায়ন করতে পারা যায়। অনেক সময় দেখা যায় অগ্রগতির কথা ভাবতে গিয়ে এমন কনফিডেন্স বেড়ে যায় যে, ঠিক ভুলের বিচার করতে গিয়ে অগ্রগতির মাত্রা হ্রাস পায়। যদি একটি মক টেস্টে পরীক্ষার্থী ব্যর্থ হয়, তাহলে নিজের অগ্রগতির পথে দুর্বলতাগুলিকে অনুসন্ধান করতে পারবে। তারপর পুনরায় সে কৌশলগুলি আয়ত্ত করবে।

১১) ধারণা গঠন —

পরীক্ষার্থী কতটা ভালোভাবে বুঝতে পারছে, সেটা জানা বা বোঝা যায় পরীক্ষার্থী কত সহজে প্রশ্নগুলি সমাধান করছে। নিয়মিত মক টেস্টে উপস্থিত হওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। যেমন – এর মাধ্যমে কত সহজে প্রশ্নগুলি সমাধান করার ধারণা তৈরি করে। শুধু যে প্রশ্নগুলির সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে দেয় তা শুধু নয়। বরং ধারণাগুলি প্রয়োগেও উন্নতি করে। এটি অনুধাবন
শক্তি বাড়ায় এবং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। তবে এই ধারণার ভীত মজবুত করার জন্য পরীক্ষার্থী প্রশ্ন এবং ধারণাগুলির সংরক্ষণ করার জন্য নোট বুক সাথে রাখতে পারে। কারণ এগুলি পরবর্তীকালে অনেক কাজে লাগে।

মক টেস্ট এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এইভাবে অনুশীলনের মাধ্যম্যে পরীক্ষার্থী নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। তার মধ্যে অনেক বেশি আত্ম নির্ভরতা বাড়ে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসিক চিন্তন, সময়সূচী নির্ধারণ করার জন্য মক টেস্ট একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে সব দেশে, সব রাজ্যে বলতে গেলে সারা বিশ্বে এই মক টেস্ট প্রথা কার্যকরী হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন নামী সংস্থা এই মক টেস্টগুলি পরিচালনা করে। এমন কি এই সংস্থাগুলি থেকেই উপযুক্ত প্রার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তাই বলা যায় মক টেস্ট ব্যাবস্থা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে একবারে অপরিহার্য।