VJRC Career Guidance Blog

Vijaygarh Jyotish Ray College | Affiliated to the University of Calcutta | NAAC Accredited | ISO 9001:2015 Certified

Career OptionsInspiration

অনলাইন সাংবাদিকতা – এর ভবিষ্যৎ কী?

আজকাল সকলেই আমরা অনলাইন সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে স্বল্প বিস্তর পরিচিত। অনেকে এই অনলাইন সাংবাদিতা-কে ডিজিটাল সাংবাদিকতাও বলে থাকে। বর্তমানে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের সাথে সাথে নানান প্রযুক্তিরও উত্থান ঘটে গেছে। একসময় সংবাদ মাধ্যম বলতে খবরের কাগজ, রেডিও বা টিভি-ই ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সব পাল্টে গিয়েছে। বর্তমান সমাজ এখন অনলাইনের ভক্ত। ২৪/৭ ঘন্টা এখন সব কিছু নিমিষের মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে সবাই জেনে যায়।

অনলাইন সাংবাদিকতা কি?

এই অনলাইন সাংবাদিকতা কি? তা নিয়ে নানান লোকের নানা নত। তাই বলা যায় যে, সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। একজন সাংবাদিক মু. লিন. বলেছেন, “ওয়েব বা মোবাইল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে যেখানে অনায়াসে খবর লাভ করা যায়। এই প্ল্যাটফর্মটা ধীরে ধীরে বিশাল রূপ লাভ করেছে। প্রথাগত বা পরম্পরাগত সাংবাদিকতার ধারা যেভাবে এগিয়ে চলেছে, ঠিক সেভাবেই অনলাইন সাংবাদিকতা বা ডিজিটাল সাংবাদিকতার ধারাও এগিয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে এটা একটা জটিল প্রশ্ন যে কোথায় কখন অনলাইন সাংবাদিকতা প্রয়োগ হচ্ছে। আর এর যে ধারা এটা কোন দিকে এগিয়ে চলছে। বা ভবিষ্যতে আর কি কি উন্নতি হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা খুবই মুশকিল ব্যাপার।

সত্যি বলতে অনলাইন মাধ্যম হল এমন একটি বিস্তারিত মাধ্যম যেটা বর্তমানে সবথেকে বেশি ব্যাবহার করা হচ্ছে। বলা যায়, ডিজিটাল মাধ্যম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ইন্টারনেটের দ্বারা টেক্সট, ভয়েজ ও ছবি একসাথে দেখানো হয়। অনলাইন সাংবাদিকতা ব্যাপারটা অনেকটা মুক্ত মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এগুলো বেশিরভাগই ফ্রিতে দেখা ও শোনা যায়। এর বেশিরভাগ খরচ চালায় বিভিন্ন অ্যাড ডিপার্টমেন্ট। এই অনলাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠ্য, অডিও, ভিডিও বা গল্প বলার মতো সব কিছু এক সাথে যুক্ত করে দর্শকের কাছে পরিবেশন করা হয়।

সাংবাদিকতার আঁতুড়ঘর

প্রথম অনলাইন সাংবাদিকতা ১৯৭০ সালে ইউনাইটেড কিংডমে শুরু হয়। এটি তখন টেলি টেক্সট নামে পরিচিত ছিল। এই টেলি টেক্সট হল এমন একটি সিস্টেম, যার মাধ্যমে সংবাদ গ্রহণকারীরা নিজেদের ইচ্ছা মত পছন্দের বিষয় নির্বাচন করে পড়তে পারত। যেমন – ধরা যাক এক দেশের রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক। তখন সেই ব্যক্তি ওই রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়েই টেলি টেক্সটে পড়তে পারত। ঠিক একইভাবে খেলার খবর, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক খবর পড়তে পারত। পুরো ব্যাপারটা টেলি টেক্সটে আলাদা আলাদা করে দেওয়া হত। টেলিটেক্সটের মাধ্যমে তখন যেভাবে সংবাদ প্রচার করা হত, সেগুলি খুব সংক্ষিপ্ত হত। যার পরবর্তী রূপ বলা যায় টিকার।

আমেরিকার একজন সাংবাদিক হান্টার. এস. টমসন. টেলি পিন্টার ব্যবহার করতেন ফ্যাক্স মেশিনের দ্বারা। একটা কাগজে মেসেজ টাইপ করে ফ্যাক্স মেশিনের মাধ্যমে পাঠানো হত। সেটা প্রেরকের কাছে থার্মাল পেপারে প্রিন্ট হয়ে আসত। তবে এই সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমেরিকার নামকরা ভিউটন নামে এক সংস্থা ওই ফ্যাক্সকে একটু উন্নত মানের বানিয়ে ব্যবহার করেছিল। এটা সম্ভবত ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কার্যকরী ছিল। এই সময় কম্পিউটার উন্নতি হতে শুরু করে। কম্পিউটার গেমিং এর প্রসেসিং ইউনিটটা পালটাতে শুরু করল, সেই সময় থেকেই ব্যাপারটা অনেক পাল্টে যায়। ইন্টারনেটের সময় আসতে আসতে শুরু হতে থাকে। তৎক্ষণাৎ সেটি পরিবেশন শুরু হয়ে যায়।

অনলাইন সাংবাদিকতার আগে যখন খবরের কাগজ ছিল তখন নিজের কোন বক্তব্য প্রকাশ করা বা নতুন কিছু আরও জানার ইচ্ছাটা অপূর্ণ রয়ে যেত। অর্থাৎ খবর পড়ে নিজের মতামত প্রেরণের কোন উপায় ছিল না। কিংবা অন্যের মতামত জানার উপায় ছিল না। কিন্তু ডিজিটাল সাংবাদিকতা আসার পর কমেন্টের মাধ্যমে পাঠক নিজের মত অনায়াসে প্রকাশ করতে পারে। সবাইয়ের মতামত গ্রহণ করাও সম্ভব হয়েছে। টেলিটেক্সটের পরবর্তী যুগে আরেকটা আবিষ্কার হয়, সেটা হল ভিডিও টেক্সট। এটা ১৯৭৯ সালে প্রিস্টেল নামক এক কোম্পানি এটি শুরু করেন। তবে এই ভিডিও টেক্সট ১৯৮৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

অনলাইন সাংবাদিকতা – বৈশিষ্ট্য

গবেষণা করে দেখা গেছে, এই অনলাইন সাংবাদিকতার চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

১) ইন্টারনেটের মাধ্যমে পারস্পারিক যোগাযোগ –

অনলাইন সাংবাদিকতার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল কিভাবে ইন্টারনেট উপলব্ধ অনলাইন সামগ্রীর একাধিক যোগাযোগ ফর্মে ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে পাঠ্য, অডিও, দৃশ্য ও ভিডিও। এই সবকিছু এক সাথে সহাবস্থান করতে পারে এবং দর্শকের চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে পারে। সুতরাং বলা যায়, সংবাদের বিভিন্ন দিকগুলিকে একসাথে যুক্ত করে নতুন নতু্ন চেহারায় উপস্থাপিত করা হয়। এই রকম পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইন সাংবাদিকতা জনসাধারনের কাছে সফলতা লাভ করছে।

২) হাইপারটেক্সচুয়ালটি —

অনলাইন সাংবাদিকতা এবং ইন্টারনেটের স্বতন্ত্র ব্যবহার করার আরেক নাম হাইপারটেক্সট। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের একটি একক দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাভাবনা প্রদান করার পরিবর্তে বা প্রথাগত মিডিয়ার ক্ষেত্রে যেমন একটি নিবন্ধ পরিভাষার মতো আক্ষরিক অর্থে ব্যাখ্যা করার পরিবর্তে হাইপারটেক্সচুয়ালটি একটি টেক্সট থেকে অন্য টেক্সটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রদান করে। বলা যায়, একে অপরের পরিপূরক বিষয়বস্তুর নেটওয়ার্কে একত্রিত করে। যেমন – কোন খেলার খবরের একটি বিষয়বস্তুর পূর্ববর্তী বিষয়গুলির লিঙ্ক থাকতে পারে, যা বোঝার জন্য সেই সম্পর্কিত ফটো বা ভিডিওগুলি এক সাইট থেকে অন্য সাইটে যেতে দেয়। যেখান থেকে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

৩) ইন্টার-অ্যাকটিভিটি —

অনলাইন মাধ্যমে সাংবাদিকতার একটি মোক্ষম বৈশিষ্ট্য হল ইন্টার-অ্যাকটিভিটি। টেলিভিশন কিংবা রেডিওর মতো মিডিয়ার থেকে এটি সবচেয়ে উন্নত প্রক্রিয়া। প্রথাগত মাধ্যমগুলিতে পাঠক বা দর্শক একবারে নিস্ক্রিয় ভূমিকায় থাকে। কিন্তু অনলাইন সাংবাদিকতায় দর্শকরা নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নিতে পারেন। কোন সংবাদ দেখতে হবে, কোন ভিডিওগুলি চালানো যাবে, কতক্ষণ দেখা যাবে এই সব কিছুই এখন নখদর্পণ। এমন কি অনলাইনে দেখার পর নিজের মতামত প্রকাশও করা যায়। এছাড়া পছন্দের সংবাদ নির্বাচন করে রাখলে সময় সময় আপডেট লাভ করা যায়।

৪) তাৎক্ষনিকতা —

অনলাইন সাংবাদিকতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তাৎক্ষনিকতা। কোন প্রযোজকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বা সংবাদ ভোক্তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়, তখন এর মধ্যে কোনও ব্যবধান থাকে না। যেহেতু তথ্য ডিজিটাল, তাই সহজে ক্রমাগত পরিবেশন করা হয়। আর সবাই এক সময় একই তথ্য লাভ করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ Citizen Journalism – Future Prospects for Students of Journalism & Mass Communication

অনলাইন সাংবাদিকতা – ভবিষ্যৎ

আধুনিক যুগ খুব দ্রুততার সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। এই চলমান সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য অনলাইন সাংবাদিক মাধ্যম একমাত্র সুবিধাজনক উপায়। এই অনলাইন সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে গড়ে তুলছে ডিজিটাল ভবিষ্যৎ।

তথ্যের জোগান

আগের সংবাদ মাধ্যমে যেসব ম্যাগাজিন বা খবরের কাগজ প্রকাশিত হত, তা কেবল নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু অনলাইনের সংবাদ পরিবেশনের ফলে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের তথ্যের সন্ধান ও জোগান অনায়াসে সম্ভব হয়। বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে এটি অ্যাক্সেস করা যায়।

সংবাদের গতিধারা

সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোর দ্রুত আপডেট হওয়ার জন্য অনলাইনে আগেই সংবাদ পেয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্রেকিং নিউজ বা এক্সক্লুসিভ নিউজ ভবিষ্যতে আরও দ্রুত পাওয়া যাবে।

ইন্টারনেটের মহিমা বৃদ্ধি

ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগে সাংবাদিকতা ইন্টার অ্যাকটিভ ছিল না। নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট যত উন্নত হচ্ছে তত মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমগুলো যেমন – ভিডিও, অডিও গ্রাফিক্স অনেক তাড়াতাড়ি উন্নত হচ্ছে।

খরচের সাশ্রয়

অনলাইন সাংবাদিকতার ফলে প্রচলিত প্রিন্ট মিডিয়ার থেকে অনেক বেশি সাশ্রয় পাওয়া যায়। এতে মুদ্রণ ও বিতরণ খরচ থাকে না। ওয়েবসাইট গুলিতে সময় সময় আপডেট পাওয়া যায়। অর্থাৎ খরচহীন নির্ভেজাল খবর পাওয়া যায় ২৪ ঘন্টা।

শ্রোতাদের চাহিদা

বর্তমান সমাজে সকলে খুব ব্যস্ত। আর ভবিষ্যতে এই ব্যস্ততা আরো বাড়বে। তাই সেক্ষেত্রে এই অনলাইন মাধ্যমই হবে সব থেকে সহজ উপায়। ব্যস্ত মানুষদের চাই কম সময়ে কীভাবে বেশি তথ্য পাওয়া যায়? তারা এখন ও ভবিষ্যতেও ফোন বা ল্যাপটপে সহজে সব কিছুর আপডেট অনায়াসে পেয়ে যাবে। ভবিষ্যতে হয়তো এর টেকনোলজি আরো বৃদ্ধি পাবে।

ডিজিটাল ডিভাইসের আকর্ষণ

অনলাইন সাংবাদিকতায় ডিজিটাল বিভাজনকে উৎসাহিত করতে পারে। অর্থাৎ যাদের ইন্টারনেট বা কোন ডিজিটাল ডিভাইস নেই। ভবিষ্যতে এই ডিজিটাল মাধ্যম তাদেরকেও আকৃষ্ট করে তুলবে। সবাই তখন এই ইন্টারনেট মাধ্যমকে আপন করে নেবে সংবাদ শোনার জন্য।

লেখার নমনীয়তা

অনলাইনে লেখার গুণমান ও দৈর্ঘ্য কিছুটা নমনীয় করা হয়। ভবিষ্যতে হয়তো মূল বক্তব্যকে হয়তো অল্প কথায় পরিবেশন করা হবে। তার ফলে সময়ের সাশ্রয় তো হবেই। সাথে কাজের ফাঁকে মানুষ বিশ্বের খবরের আপডেট পাবে প্রতি মুহূর্তে।

আরও পড়ুনঃ Impact of Citizen Journalism on Professional Journalism

অনলাইন সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় অসুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল গোপনীয়তার অভাব। যেকোনো ভাবে পাঠকদের ডেটা সংগ্রহ বা চুরি করা হয়ে যেতে পারে। এবং তা বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই এটা খুবই ঝুঁকি রয়েছে। এই সংবাদ আউটলেটগুলি পাঠকদের গোপনীয়তার ফাঁস করে দিতে পারে। এটি নিউজ আউটলেট এবং তাদের পাঠকদের মধ্যে আস্থা হারাতে পারে, বিশেষ করে যদি পাঠকরা মনে করেন যে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি নানা ভাবে হ্যাক হতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে মানুষ অনেক বেশি অলস হয়ে পড়বে। সব তথ্য যখন অনায়াসেই পাওয়া যাবে, তখন মানুষ বই পড়ে বা অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য সংগ্রহ করবে না।

অনলাইন সাংবাদিকতা নিঃসন্দেহে সাংবাদিকতার ভবিষ্যতের ওপর বেশ ভালমতো প্রভাব ফেলবে। বিশ্বের সব দেশ যত বেশি ডিজিটাল হয়ে উঠবে, অনলাইন সাংবাদিকতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। সম্ভবত বিভিন্ন সংবাদ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারে এই অনলাইন হবে একমাত্র মাধ্যম। এই অনলাইন সাংবাদিকতায় যেমন কিছু ভালো আছে, তেমন কিছু মন্দ দিকও বর্তমান আছে। তবে ভবিষ্যৎ এই অনলাইন সাংবাদিকতার ভালো না মন্দ কোন দিকটিকে কাজে লাগাবে তা বর্তমানে বলা সহজ ব্যাপার নয়। তবে যদি অনলাইন সাংবাদিকতার ত্রুটিগুলোকে এড়িয়ে শুধু ভালো দিকটাকে উন্নত থেকে উন্নতর করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতের অনলাইন সাংবাদিক টেকনোলজি একটা বিশাল পর্যায় পৌঁছে যাবে। তাই ফ্যাক্ট চেকিং, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, পাঠকদের গোপনীয়তা দিকে খেয়াল রাখা এবং সাংবাদিকতার মান ঠিক রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। এইভাবে অনলাইন সাংবাদিকতা ভবিষ্যতে বিপুল উন্নতি ও পরিবর্তন ঘটাবে।